Uncategorized

রাউটার কি? রাউটার কিভাবে কাজ করে ও রাউটারের প্রকারভেদ

বর্তমান সময়টা ইন্টারনেটের। আর ইন্টারনেট মানেই তো কানেকটিভিটি, এক ডিভাইস থেকে আরেক ডিভাইস কিংবা এক সার্ভার থেকে ডিভাইসকে কানেক্ট করার কাজটিই করে রাউটার। সাধারণত রাউটার ব্রডব্যান্ড সংযোগ থেকে ডাটা রাউট করার মাধ্যমে সংযুক্ত ডিভাইসগুলোতে ইন্টারনেট প্রোভাইড করে।
রাউটার মূলত হচ্ছে একটি নেটওয়ার্কিং ডিভাইস। আজকের এই ব্লগে আমরা আলোচনা করবো রাউটার সম্পর্কে। জানবো কিভাবে রাউটার কাজ করে এবং রাউটারের বিভিন্ন প্রকারভেদ সম্পর্কে।
রাউটার কি?
রাউটার হচ্ছে একটি ইলেকট্রিক ডিভাইস, হার্ডওয়ার এবং সফটওয়্যার এর সমন্বয়ে তৈরি। রাউটার শব্দ থেকে বোঝা যায় এটি এমন একটি ডিভাইস যেটি রাউট (Route) করে। ১৯৭৪ সালে রাউটার আবিষ্কার করা হয়। ওই সময়ে মিনি কম্পিউটারগুলো রাউটার হিসেবে কাজ করতো। তবে আধুনিক রাউটারের মতো নিরাপত্তা কিংবা দ্রুত গতিতে ডাটা ট্রান্সফারের সুবিধা ছিলো না।
রাউটার মূলত ডাটা রাউটিং করার মাধ্যমে দুই বা ততোধিক ডিভাইসকে একসাথে যুক্ত করে। এটি একটি স্মার্ট ডিভাইস যা সংযুক্ত ডিভাইসগুলোতে ডাটা পাঠানোর জন্য সবথেকে সহজ পথটি নির্ধারণ করে নেয়।
আমরা দৈনন্দিন জীবনে ইন্টারনেট ব্যবহার করি, যেমন: ব্রাউজিং, ইমেইল পাঠানো, অনলাইন গেইম খেলা, ভিডিও স্ট্রিমিং। ইন্টারনেটে এ ডাটাগুলো ডিভাইস উপযোগী হিসেবে থাকে না, এনক্রিপ্টেড (Encrypted) আকারে থাকে। রাউটার এই এনক্রিপ্ট করা ডাটাকে আমাদের ডিভাইসে পাঠায় ডাটা রাউটিং করার মাধ্যমে।
অর্থাৎ রাউটার মূলত একটি তৃতীয় মাধ্যম। যার কাজ হচ্ছে সার্ভার থেকে ডাটা সংগ্রহ করে যুক্ত থাকা ডিভাইসগুলোতে প্রেরণ করা। রাউটার একই সাথে গ্রাহক ও প্রেরক যন্ত্র হিসেবে কাজ করে।
রাউটার কিভাবে কাজ করে?
শুরুতেই বলেছি রাউটার একটি স্মার্ট ডিভাইস, একটি নেটওর্য়াক তৈরির জন্য এটি ব্যবহৃত হয়। সাধারণত একটি নেটওর্য়াকে দুইটি মুখ্য বিষয় থাকে, একটি হলো সার্ভার আরেকটি হলো রিসিভার। সার্ভার থেকে রিসিভারের কাছে ডাটা পৌঁছে দিতে একটি মাধ্যম লাগবে। সেই মাধ্যমটি হলো রাউটার।
আপনি যদি বাসা-বাড়িতে ব্যবহৃত রাউটারের দিকে খেয়াল করুন, তাহলে দুইটি জিনিস দেখতে পারবেন। রাউটারের একটি প্রান্তে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া থাকে আর অন্য প্রান্তে থাকে এন্টেনা। প্রথম প্রান্ত দিয়ে তারের মাধ্যমে ইন্টারনেট প্রোভাইডার থেকে রাউটার ডাটা রিসিভ করে, আর এন্টেনার মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত ডিভাইসে ডাটা প্রেরণ করে। এটা হচ্ছে রাউটারের কাজের মূলনীতি।
কিন্তু বাস্তবে জিনিসটি হয় উল্টোভাবে! যুক্ত থাকা ডিভাইস দিয়ে ধরুন আপনি ইউটিউবে একটি ভিডিও দেখতে চাইলেন। এক্ষেত্রে প্রথমে আপনার ডিভাইস থেকে রাউটারে একটি রিকোয়েস্ট পাঠানো হবে।
এবার রাউটার ইন্টারনেট সংযোগ থেকে সেই ডাটা রিসিভ করবে এবং রাউট করে পাঠিয়ে দিবে আপনার ডিভাইসে। রাউটার আপনার কাছে ডাটা পাঠাতে প্রথমেই রাউটিং টেবিল তৈরি করবে, এবং সবথেকে সহজ পথটি নির্ধারণ করবে। কিন্তু এই কাজটি হবে একদম তড়িৎ গতিতে। মূলত এভাবেই রাউটার কাজ করে।
রাউটারের প্রকারভেদ: বিভিন্ন প্রকার রাউটার
রাউটারের কথা ভাবলে চোখের সামনে কি ভেসে উঠে? একটা ছোট চ্যাপ্টা ডিভাইস, প্রান্তে একটা/দুইটা এন্টেনা লাগানো, তাইতো? রাউটার মানে যদি আপনি এইটুকুই জেনে থাকেন তাহলে আপনি এখনো অনেক কিছুই জানেন না। কাজ, আকার ও ধরনের উপর ভিত্তি বিভিন্ন প্রকারের রাউটার আছে। যেমন:
ব্রডব্যান্ড রাউটার
ওয়্যারলেস রাউটার
কোর রাউটার
এজ রাউটার
ইন্টারনেট প্রভাইডার রাউটার
পকেট রাউটার
ভার্চুয়াল রাউটার
নিচে আমরা বিভিন্ন প্রকারের রাউটার সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো –
ব্রডব্যান্ড রাউটার ( Broadband Router)
ব্রডব্যান্ড রাউটার হচ্ছে একধরনের তারযুক্ত (Wired), দ্রুত গতির রাউটার। আমাদের দেখা রাউটারের মতো এতে কোনো এন্টেনা থাকে না। কো এক্সিয়েল ক্যাবল দিয়ে এই রাউটারের সাথে কম্পিউটারগুলো যুক্ত করতে হয়।
অনেক কম্পিউটারের মধ্যে দ্রুত গতিতে ডাটা রাউটিং করে নেটওয়ার্ক তৈরি করতে এই ব্রডব্যান্ড রাউটার ব্যবহার করা হয়। সরাসরি তারের মাধ্যমে সংযোগ করায় এতে ডাটা ট্রান্সফারের গতি অনেক বেশি থাকে। আন্ত: যোগাযোগের ক্ষেত্রে ব্রডব্যান্ড রাউটার অনেকটা হাবের মতো কাজ করে।
ওয়্যারলেস রাউটার (Wireless Router)
রাউটার বলতে আমরা ওয়্যারলেস রাউটারকেই বুঝে থাকি। বহুল ব্যবহৃত এই ধরনের রাউটার আমাদের বাসা, অফিস ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার করা হয়। রাউটারটি ইন্টারনেট সংযোগের সাথে যুক্ত করলে এন্টেনার মাধ্যমে তারবিহীন ইন্টারনেট ছড়িয়ে দেয়।
ওয়্যারলেস রাউটারের একটা নির্দিষ্ট রেঞ্জ থাকে। এই রেঞ্জের মধ্যে মোবাইল, ল্যাপটপ বা ইন্টারনেট ডিভাইস কানেক্ট করা যায়। রাউটার ভেদে উন্মুক্ত স্থানে এদের রেঞ্জ থাকে ২৮০-৩০০ ফিট। ওয়্যারলেস রাউটারে পাসওয়ার্ড সেট করে নিরাপদ একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করা যায়।
কোর রাউটার (Core Router)
কোর রাউটার একটি শক্তিশালী ও উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন রাউটার। সাধারণ বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানে মাদার রাউটার হিসেবে এটি ব্যবহার করা হয়। এর সাথে যুক্ত থাকে একাধিক ওয়্যারলেস রাউটার ও ডিভাইস।
মূলত একটি লোকাল নেটওয়ার্ক (LAN) গঠনের ব্যাকবোন হিসেবে কাজ করে কোর রাউটার। এই রাউটার শুধুমাত্র লোকাল নেটওয়ার্কে ব্যবহৃত হয়, বাইরের কোনো নেটের সাথে যুক্ত থাকে না।
এজ রাউটার (Edge Router)
এজ রাউটারও মূলত LAN নেটওয়ার্ক স্থাপনের জন্য ব্যবহার করা হয়। অন্য LAN বা WAN এর সাথে সংযোগ স্থাপন করে তবে এটি মাদার রাউটার হিসেবে কাজ করে না। LAN নেটওয়ার্কের এর প্রান্তে রাখা হয় এই রাউটার। এটি অন্যান্য LAN এবং WAN থেকে ডেটা পাঠাতে এবং গ্রহণ করতে BGP (বর্ডার গেটওয়ে প্রোটোকল) ব্যবহার করে।
ইন্টারনেট প্রভাইডার রাউটার (Internet Provider Router)
আপনারা আইএসপি (ISP) শব্দটি শুনে থাকবেন। যার মানে হচ্ছে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার। যেমন: গ্রামীনফোন, রবি, এয়ারটেল, বাংলালিংক টেলিটক।
এ রাউটারগুলোর মাধ্যমেই আমরা সিম ব্যবহার করে মোবাইল, ল্যাপটপ, কম্পিউটারে ইন্টারনেট সেবা নিতে পারি। মূলত ISP এর মধ্যকার সংযোগ (inter-connetion) স্থাপন করতেই ব্যবহৃত হয় Internet Provider রাউটার। এধরনের রাউটারের রেঞ্জ এবং ক্ষমতা অনেক বেশি হয়ে থাকে।
পকেট রাউটার (Pocket Router)
আকারে ছোট ও সহজে বহনযোগ্য হওয়ার এর নাম পকেট রাউটার। এটার কার্যপ্রণালী অনেকটা ওয়ারলেস রাউটারের মতোই। তবে এতে সরাসরি তারের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া থাকে না।
এটিতে ইন্টারনেট এক্সেস পেতে ব্যবহার করা হয় সিম। আর সিমে ইন্টারনেট প্যাকেজ একটিভ থাকতে হয়। এর মাধ্যমে একটি সিমের ডাটা প্যাক দিয়েই অনেক ডিভাইস চালানো যায়। ব্রডব্যান্ড লাইন নেই এমন জায়গায় ইন্টারনেট ব্যবহার এবং সহজে বহনযোগ্য হওয়ায় এর জনপ্রিয়তা দ্রুত বাড়ছে।
ভার্চুয়াল রাউটার (Virtual Router)
ভার্চুয়াল রাউটার মূলত উইন্ডোজ (Windows) অপারেটিং সিস্টেমের একটি ওপেনসোর্স সফটওয়্যার। এটার মাধ্যমে কম্পিউটারের নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত হওয়া যায়। এটি মূলত একটি সফটওয়্যার অ্যাক্সেস পয়েন্ট (SoftAP) হিসেবে কাজ করে। নেটওয়ার্ক নিরাপদ রাখতে WPA2-PSK / AES এনক্রিপশনের সাথে কাজ করে ভার্চুয়াল রাউটার।
উপসংহার
তথ্য প্রযুক্তির এই সময়ে রাউটার খুবই গুরুত্বপূর্ন একটি ডিভাইস। সাচ্ছন্দে ইন্টারনেট ব্যবহার ও জটিল নেটওয়ার্ক স্থাপনে রাউটারের ভূমিকা অপরিসীম।
এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করেছি রাউটারের প্রকারভেদ নিয়ে। রাউটার কি এবং কিভাবে কাজ করে এসব নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা করেছি। রাউটার সম্পর্কিত কোনো প্রশ্ন বা জানার থাকলে কমেন্ট করুন। আর এই পোস্টটি আপনার সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করতে ভুলবেন না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *